নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট নগরীর তালতলা, উপশহর, জেলা প্রশাসক অফিসের সামন, নাগরি চত্ত¡র সহ বিভিন্ন এলাকা যেন পরিনত হয়েছে একেকটি মাছ বাজার । নগরীর আনাচে কানাচে এমন ভাসমান অবৈধ মাছ বাজার বসিয়ে পরিবেশ নষ্ট করাসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে বেঘাত সৃষ্টি করছে এইসব ভাসমান মাছ বাজার । তাদের এই দৌরাত্ব বন্ধসহ কাজিরবাজার মৎস্য আড়তে খুচরা মাছ বিক্রি ও নগরীর অলিগলি ও ফুটপাতে অবৈধভাবে মাছ বিক্রয় বন্ধের দাবিতে লালবাজার মৎস্যব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন মাছ বাজারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক সভা রোববার সন্ধায় নগরীর লালবাজারে অনুষ্ঠিত হয়।
লালবাজার মৎস্যব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি মো. এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমদ জগলুর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার, সিরাজুল ইসলাম, জলালবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুস সাত্তার, জহির উদ্দিন কুনু, ফয়জুল ইসলাম আরিজ, দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, টিলাগড় মাছবাজারের প্রতিনিধি শিপার আহমদ, শাহী ঈদগাহ মাছ বাজারের প্রতিনিধি সুরুজ মিয়া সহ বিভিন্ন বাজারের প্রতিনিধিবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, সিলেট মহানগরীর অলিতে-গলিতে এখন মাছ বাজার নিয়ে বসছেন একটি মহল। তাছাড়া কাজিরবাজার মৎস্য আড়তে পাইকারী মাছ বিক্রির নিয়ম থাকলেও তারা সেটা না মেনে খুছরা মাছ বিক্রয় করছেন। যে কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন নগরীর লালবাজার সহ অন্যান্য বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ কাজিরবাজারের পরিত্যাক্ত মাছ ব্যস্ততম নগরীর বিভিন্নস্থানে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা সরকারি ট্যাক্স, দোকান ভাড়া সহ অনান্য প্রাসঙ্গিক খরচ চালিয়ে ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, ক্বীনব্রীজ এলাকা, সহ অন্যান্য এলাকা জুড়ে প্রতিদিনই বসছে অবৈধ মাছ বাজার। তারা কাজিরবাজার মৎস্য আড়তদারদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। সভায় বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, যদি রাস্তাঘাটে মাছ বিক্রয় বন্ধ করা না হয়, তাহলে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের সকলকে নিয়ে রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সিলেট নগরীর তালতলাস্থ বাংলাদেশ ব্যংক এর সামনে প্রতিদিন যেন অঘোষিত মাছ বাজার বসানো হয় । যেখানে সেখানে মাছ মাজার না বসিয়ে নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারন করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা ।
সরেজমিনে গিয়ে গতকাল সোমবার বিকালে নগরীর তালতলা, নাগরি চত্ত্বর এলাকা দেখা যায়, সুরমা নদীর তীরবর্তী নাগরি চত্ত্বর ও তালতলা বাংলাদেশ ব্যংক এর সামনে পুরো রাস্তা জুড়ে ভাসমান অবৈধ মাছ ব্যবসায়ীরা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন । একজন মাছ বিক্রেতা ইলিশের ভাগাড় নিয়ে বসেছেন । ইলিশের কেজি সাড়ে পাঁচ শ টাকা দাম হাকাচ্ছেন । এরকম রয়েছেন অসংখ্য মাছ ও সবজি বিক্রেতা ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাশেই আদালত চত্ত্বর, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, গণপূর্ত ভবন, বাংলাদেশ ব্যংক সহ একটি গুরুত্বপুর্ন এলাকায় এমন ভাসমান মাছ বাজার এর কারনে ট্র্যাফিক জ্যাম লেগেই থাকে । এছাড়াও নগরীর নাগরি চত্ত্বর, বন্দর, উপশহর সহ বিভিন্ন এলাকায় বসানো হচ্ছে ভাসমান মাছ বাজার । এতে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
উপশহরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, উপশহর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা । এখানে প্রবেশের মুখেই বসানো হয়েছে মাছ বাজার, মাছের ময়লা দূর্ঘন্ধজনিত পানি ফেলে যাওয়ায় তাতে করে ছড়িয়ে পরছে রোগ জীবানু বাড়ছে স্বাস্থঝুঁকি। কয়েকবার এদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাদেরও সিন্ডিকেট রয়েছে।
লালবাজার মৎস্যব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমদ জগলু বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় আইনের কোন তোয়াক্কা না করে নগরীর যত্রতত্র মাছ বাজার বসিয়ে ছোট ছোট মৎস্য ব্যবসায়ীরা শুধু পরিবেশ নষ্ট করছেন না, বরং মৎস্যজীবিদের ঐতিহ্য নষ্ট করছে। যারা এসবের সাথে জড়িত তারা প্রকৃত মৎসজীবি না। তিনি অবিলম্বে এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।
এ ব্যাপারে আলাপকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, যেখানে সেখানে মাছ বাজার উচ্ছেদ নিয়ে প্রতিনিয়তই অভিযান হচ্ছে । মেয়র সব সময় ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে মাঠ আছেন ।